নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি ::
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদর সহ বিভিন্ন ইউনিয়নে ইট ভাটা গুলোতে কোন নিয়মনীতি ওপ্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করে জ¦ালানী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বনের কাঠ এবং পাহাড়, ফসলি জমি ও টিলা কেটে মাটি পাচার চলছে প্রকাশ্যে। সরকারিভাবে নিষিদ্ধ হওয়ার পরও উপজেলা সদরের বৃহত্তর বিছামারা ও বাইশারী ইউনিয়নের কাগজিখোলা গ্রামের বিভিন্ন স্থানে ইট তৈরীতে মাটি পাচার সহ কাঠ পোড়ানোয় পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদর থেকে চাকঢালা চলাচল সড়কের চাক হেডম্যানপাড়াসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকার পাহাড় ও ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে ইট ভাটার জন্য। এসব মাটি ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহার করছেন জহির আহমদ কোম্পানী নামের এক ব্যক্তি। প্রকাশ্যে ফসলী জমি ও পাহাড় কেটে মাটি সরবরাহ করে লন্ডভন্ড করে ফেললেও স্থানীয় ও জেলা প্রশাসন রয়েছেন নিরব দর্শকের ভূমিকায়।
এছাড়াও উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের কাগজিখোলায় সরকারি স্কুল, পুলিশ ফাড়ি, জনবসতি ও বণায়ন এলাকার সন্নিকটে ইট ভাটা তৈরী করে পুড়ানো হচ্ছে বণের কঁচিকাঁচা কাঠ ও কাটা হচ্ছে মাটির উপরিভাগ। যার কারণে পাশের ওই সবুজের বুকে আছড়ে পড়েছে ইটভাটার কালো ধোঁয়া। নাইক্ষ্যংছড়ি-লামা সীমান্ত ঘেষা কাগজিখোলা এলাকায় প্রশাসনের অগোচরে এ ইটভাটায় অবৈধ ভাবে কাজ চলছে। বিগত সময়ে নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি জনস্বার্থে উক্ত ইট ভাটাটির কার্যক্রম বন্ধ করে দিলেও বর্তমানে পূনরায় কাজ শুরু করেছে পাশর্^বর্তী চকরিয়া উপজেলার খুটাখালীর তিন ব্যসায়ী পার্টনার নাজমুল হক পিয়ারো, শামসুদ্দিন ও কামাল উদ্দিন মেম্বার।
স্থানীয় ঈদগড় হেডম্যান পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষক জানান, স্কুলের একশত গজ দূরত্বে উক্ত ইট ভাটাটি অবস্থিত। লাকড়ি পোড়ানোর সময় স্কুলের শিক্ষার্থীদের মুখে কাপড় দিয়ে ক্লাস করানো হয়। ইট ভাটার কালো ধুয়ায় ছেয়ে যায় সবুজের অভয়ারণ্য।
যদিওবা ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩-এর ৫-এর ১ ধারায় উল্লেখ রয়েছে, কোনো ব্যক্তি ইট প্রস্তত করার জন্য কৃষিজমি বা পাহাড় বা টিলা থেকে মাটি কেটে বা সংগ্রহ করে তা ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু এই আইনের প্রয়োগ না থাকায় নাইক্ষ্যংছড়িতে ইট তৈরির জন্য কৃষিজমির মাটি ব্যবহার করা দেদারছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, জমির মাটির একমাত্র উর্বরতা শক্তি হলো জৈব পদার্থ। একে বলে মাটির প্রাণ। এই জৈব পদার্থে আছে নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম ও ফরফরাস। জমির ১০ থেকে ১৫ ইঞ্চির মধ্যে এ জৈব পদার্থের শক্তি থাকে। কিন্তু ইটভাটার মালিকেরা জমির ওপরের ২০ থেকে ২৫ ইঞ্চি মাটি কেটে নেওয়ার কারণে ওই জমি উর্বরতা শক্তি হারিয়ে ফেলে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সৈয়দ আশরাফ বলেন- নাইক্ষ্যংছড়ির কোন ইট ভাটায় পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। কৃষি জমি, পাহাড় বা টিলা থেকে মাটি কাটা ও সরবরাহ করা যাবে না।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক জানান, উন্নয়নকাজে ইটের প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনায় নিয়ে আগে কিছুটা শিথিল করা হয়েছিল। পরিবেশ বিধ্বংসী কাজের জন্য প্রয়োজনে ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, অবৈধ ইটভাটার মালিকরা মৌসুমের শুরুতেই মুনাফা লাভের পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে লোক দেখানো অভিযান চালানো হলেও পাহাড় কর্তন ও জ¦ালানী ব্যবহারের জন্য দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা না হওয়ায় প্রতি বছর ইট ভাটায় অবৈধ কার্যক্রম বাড়ছে বলে মনে করেন পরিবেশবাদী মহল। এজন্য মৌসুমের শুরুতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি পর্যালোচনা করে এসব অবৈধ ইট ভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া প্রয়োজন বলেও তারা মনে করেন।
পাঠকের মতামত: